প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্রে হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে বহু চর্চা রয়েছে। বর্তমানে চিকিত্সা বিজ্ঞানও হরিদ্রা বন্দনায় মুখর। চিকিত্সকদের মতে, হলুদের মধ্যে রয়েছে অন্তত ১৪টি মহৌষধের গুণ। হলুদের উপকারিতা বিশদে জানতে গত পাঁচ বছর ধরে বিশ্বজুড়ে সমীক্ষা চালানোর পর উচ্ছ্বসিত এক মার্কিন গবেষণা সংস্থা। সমীক্ষা রিপোর্ট জানিয়েছে, হলুদের মধ্যে রয়েছে কারক্যুমিন নামে এক উপাদান, প্রায় ৬০০টি রোগ সারানোর ক্ষেত্রে যার ব্যবহার অব্যর্থ ফল দিয়েছে।
২০০৮ সালে ‘ড্রাগস ইন আর অ্যান্ড ডি’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী, রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে হলুদ থেকে পাওয়া কারক্যুমিন। জানা গিয়েছে, শরীরের এই সমস্যা দূর করতে বহুল ব্যবহৃত ওযুধ লিপিটর-এর সমতুল্য কাজ করে এই উপাদান।
১৯৯৯ সালে প্রকাশিত ‘ফাইটোথেরাপি রিসার্চ’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে, হলুদের অন্য এক উপাদান ‘পলিফেনল’ চোখের অসুখ ‘ক্রনিক অ্যান্টিরিয়ার ইউভেইটিস’ সারাতে কর্টিকোস্টেরয়ডের কাজ করে। উল্লেখ্য, এই রোগের প্রকোপে চোখে প্রচণ্ড জ্বালা ও প্রদাহ দেখা যায়। এই স্টেরয়েড ফুসফুস প্রতিস্থাপনের পর দ্রুত ক্ষত সারাতেও সক্ষম। ২০০৩ সালের এক মেডিক্যাল রিপোর্ট জানাচ্ছে, ক্যানসারজনিত প্রদাহের চিকিত্সাতেও এই স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়।
২০১১ সালের এক রিপোর্ট অনুসারে, মানসিক অবসাদ রোধ করতে ব্যবহৃত অ্যান্টি ডিপ্রেস্যান্টের কাজও করে কারক্যুমিন। এ ছাড়া, এই উপাদানে রয়েছে অ্যাস্পিরিনের গুণ। এর প্রয়োগে ভ্যাস্কুলার থ্রম্বোসিস আক্রান্ত রোগীর রক্তের ঘনত্বের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এ ছাড়া, ক্যানসার নিরাময়ে প্রচলিত কেমোথেরাপি চিকিত্সায় ব্যবহৃত অক্স্যালিপ্ল্যাটিন-এর সঙ্গেও কারক্যুমিন-এর তুলনা করা চলে। চিকিত্সকদের দাবি, কলোরেক্টাল ক্যানসারের চিকিত্সায় কারক্যুমিন প্রয়োগে সুফল মিলেছে।
২০০৯ সালের এক গবেষণায় জানা গিয়েছে, মধুমেহ বা ডায়াবেটিস রোগের চিকিত্সাতেও কারক্যুমিন-এর প্রয়োগ ফলদায়ক। যকৃতে গ্লুকোজের উত্পাদন ঠেকাতে হলুদের এই উপাদান থেকে তৈরি ওষুধ প্রচলিত ডায়াবেটিস রোধকারী মেটমোফিন-এর চেয়ে অনেক গুণ কার্যকর বলে জানা গিয়েছে। ভারতীয় রান্নায় হলুদের ব্যবহার সুদীর্ঘ কাল থেকেই চলেছে। নানা শুভ আচার-অনুষ্ঠানে হলুদ অনিবার্য। এবার তার ওষোধি গুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পর বলা বাহুল্য, বিশ্বে হলুদের আরও কদর বাড়বে।